Header Ads

Header ADS

রোমান্টিক গল্প, অসমাপ্ত ভালোবাসা (আকাশ বিশ্বাস) সত্য গঠনা অবলম্বনে।

অসমাপ্ত ভালোবাসা 
                         লেখকঃ আকাশ বিশ্বাস   

আমি সালমান,,অনার্স ২য় বর্ষের ছাত্র,
ছোটবেলা থেকেই শখ ছিল ক্রিকেটার হব. তাই স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষে একটা একাডেমীতে ক্রিকেটের প্রশিক্ষণ নিই.
এভাবেই আমার জীবন অতিবাহিত হচ্ছিলো, প্রেম ভালোবাসা থেকে আমি অনেক দূরে ছিলাম...
সময়টা ২০১২ সাল সিলেটের বাইরে খেলতে গিয়েছিলাম.
আর সেখানেই আমার জীবনে বসন্তের প্রথম ফুলের মত একটি অনিন্দ্য সুন্দরি রমনির সাথে পরিচয় হয়েছিল,,

তাও আবার অনেক কাঠখড় পোড়ানোর পরে.
এক বন্ধুর মাধ্যমে তার সাথে আমার প্রথম কথা হয়.. কথা গুলো স্বাভাবিকতার মধ্যেই হয় যেমন কেমন আছেন, পড়ালেখার কথা... কথা শেষ হওয়ার পর চলে আসি আর আমরা সিলেটের ম্যাচ জিতে ফিরি...বাসায় আসার পর ওর কথা খুব মনে পড়লো, খুব মিস করতে থাকি তাকে... তিনদিন যাওয়ার পর আর না পারতে আমার সেই বন্ধুকে সব খুলে বলি... সে আমাকে অপেক্ষা করতে বলে.. সে কিভাবে তার (মেয়েটার) মোবাইল নম্বর ব্যবস্থা করেছিল তা আজো অজানা... সেদিন বিকালবেলা এশার আজানের পর কল দিই তাকে... কল দেয়ার প্রায় সাথে সাথে এক মহিলা কল ধরে আর আমি ভয়ে কল কেটে দিয়েছিলাম.. তারপর আবার সন্ধ্যার দিকে আবার কল দিই দেখি ও ধরেছে. ধরতেই আমি বললাম যে

-আপনি কি সুমু?
নিয়ে কথা বলতে থাকি.. মজার কথা হলো আমরা ২ জনেই সমবয়সী তাই তার সাথে আমার পড়ালিখার বিষয়ে কথা বেশি হয়েছিলো ..যদিও লেখাপড়াতে যদি গাধা বৃত্তি থাকতো তাহলে আমি তা পেতাম..সেদিন আর কথা হয়নি..

পরেরদিন....
সকালে কল দিলাম কিন্তু তার মোবাইল বন্ধ!!!
সারাদিন তাকে কলের পর কলদিতে থাক্ক.. কেমন যেন একোটা শুন্যতা আমাকে ক্রমশ গ্রাস করতে থাকে...খুব মিস করতে থাকি তাকে... অবশেষে আমার সবচেয়ে কাছের বন্ধু সিদ্দিক কে ব্যাপারটা খুলেব লি... সিদ্দিক বলে যে

দোস্ত তুই তো সুমুকে ভালোবাসিস... কথাটা তাকে বলে দে দোস্ত নাহলে পরে আর হয়তো পারবি না,
বিকালের দিকে কল আসলো তার নম্বর থেকে..কিন্তু আমি ক্রিকেটে ব্যস্ত থাকায় তার কলটা কেটে দিই..আর ঠিক দশ মিনিট পরে তাকে কল দিলাম।কল দেয়ার সাথে সাথে বলি যে
আমি তোমার সাথে আমার খুব গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে.

সুমু -কি এমন গুরুত্বপূর্ণ কথা জনাব?
আমি - আমি যখন তোমাদের কলেজের মাঠে খেলতে গিয়েছিলাম তখন তোমাকে মাঠ থেকে দেখতে পাই..তখনি তোমাকে আরো কাছাকাছিভাবে দেখার জন্যে মাঠ থেকে বেরিয়ে যাই.. যদিও কড়া নিয়মকানুনের জন্যে তোমার সাথে কথা বলতে পারি নি.. তবুও তোমার সামনে গিয়েছিলাম.. জীবনে কখনো কোনো মেয়ের সামনে আমি এভাবে যাইনি.. কিন্তু একমাত্র তোমার ক্ষেত্রেই এই ব্যতিক্রমি ঘটনা ঘটেছিলো... আমি তোমার এলোকেশী চুলের মায়া অগ্রাহ্য করতে পারি নি. 

তোমার কাজলকালো পটলচেরা চোখের সাগরে ডুবেছিলাম... বর্ননাতীত এক অনুভুতির জন্ম হয়েছিলো যা কখনো ভুলতে পারবোনা আমি...আমি দেখেছিলাম তুমিও আমার দিকে তাকিয়েছিলে আর মুচকি মুচকি হাসছিলে... সেদিনেই আমি তোমার সাথে আমার বন্ধুর মাধ্যমে কথা বলে ফেলি... সেটা হয়তো ইতিহাসের সেরা সাহস হয়ে থাকবে আমার জবনের... আমি সত্যি বলছি আমি তোমাকে খুব বেশি ভালোবাসি.. আমি তোমাকে ছাড়া আর একটা মূহুর্তও কল্পনা করতে পারছিনা... তোমাকে আমার ভালোবাসিতেই হবে।

আমি এতই পাগল হয়ে গিয়েছিলাম যে আমি ভুলে গিয়েছিলাম ভালোবাসায় জোর বলতে কিছুই নেই.. কিন্তু আমি জোর দিয়ে বলেছিলাম... আর এর ফলেই সাথে সাথে সে কল কেটে দেয় আর ফোন বন্ধ করে দেয়, আমি অনেক বার কল করি কিন্তু প্রতিবারই বন্ধ পাই, এরপর দিন বিকাল ৫টায় তার নম্বর থেকে অবশেষে কল আসে আর তা দেখেই আমার ধড়ে যেনো প্রান ফিরে আসলো।

আমি তাড়াতাড়ি কল রিসিভ করে তার সাথে কথা বলি
আমি - তোমার মোবাইল বন্ধ ছিলো কেনো বন্ধ ছিলো? কতবার কল দিয়েছিলাম জানো?
সুমু - আসলে বাবা বাসায় চলে এসেছিলো তাই.
আমি - আচ্ছা আমি কাল যা বলেছিলাম তা শুনেছিলে?
সুমু - আমি কোনোদিন এমন করিনি. আমার কোন ছেলে বন্ধুও নেই.. আমার পক্ষে সম্ভব না এইসব
(নির্লীপ্ত কন্ঠে)

ওর এই কথা শুনে আমার কান্না চলে আসে..আমি কান্না করতে করতে বলি
- তোমার জন্য আমি সব কিছুই করতে রাজি... তুমি যা বলবে আমি তাই করবো...দয়া করে না কোরো না...
এভাবেই আমি অনুনয় বিনয় করতে থাকি আর সে বার বার না বলতে থাকে.

আমি আসলেই জানতাম না যে অনুনয় করে ভালোবাসা পাওয়া যায় না..
অবশেষে তাকে বলি..
- তোমাকে আমি একদিন সময় দিলাম দয়া করে ভেবে দেখো দয়া করে...(কান্না করতে করতে)
সুমু - ঠিকাছে কাল বলবো কিন্তু আমার উত্তর এটাই থাকবে.
আমি,, আমি কালকের আগে আর কল অথবা এস.এম.এস দিবো না.!

এইসব কথার মধ্য দিয়ে আমাদের কথা শেষ হয় সেদিনের মতো, কিন্তু আমার আবেগময় মন সময় হবার আগেই প্রায় ১০০ এর উপরে এস.এম.এস দিয়ে দিয়েছিলাম তাকে.,সেদিন রাতেও আমি ঘুমাতে পারিনি.. পরদিন সকালে কল দিলাম কিন্তু মোবাইল বন্ধ, সারা সকাল কল দিতে থাকি কিন্তু মোবাইল বন্ধ.

হটাৎ দেখি বিকাল ৩টা র দিকে কল ঢুকে... কল ধরার সাথে সাথে বলি..
-কি এখনো জানালে না যে? (উদ্বেগপূর্ণ কন্ঠে)
-সত্যি বলবো নাকি মিথ্যে?
- আমি সত্যটা শুনতে চাই।

-আসলে আমিও তোমাকে ভালোবাসি... অনেক ভেবেছি এইসব নিয়ে... তুমি আমাকে আমার চাইতে বেশি ভালোবাসো যা আমার হৃদয় ছুয়ে গিয়েছে.. তাছাড়া আমাদের প্রথম দেখা আর কথা হওয়ার পর থেকেই আমি তোমার প্রতি দূর্বল ছিলাম.. আমিও তোমাকে মিস করতাম খুব আর এখনো করি!! কিন্তু আমার পরিবারের কথা মনে পড়লে সব অনুভুতি উধাও হয়ে যায়... কষ্ট আমাকে কুড়ে কুড়ে খায়...আর তুমিও জানো আমার পরিবার কেমন.।

যাই হোক আমার কিছু শর্তাবলি আছে সেগুলো হল
১) কোনোদিন আমাদের ২ জনের ভালোবাসার কথা কাওকে বলতে পারবে না.. তোমার বেস্টফ্রেন্ডকে ও না!! কারণ আমি চাইনা কোন ৩য় ব্যক্তি আমাদের ২ জনের মধ্যে আসুক...

২) আমাকে কল বা এস.এম.এস দিবে না আমি না দেয়া পর্যন্ত... কেননা পরিবারের কেও জানতে পারলে সমস্যাটা আমাদের ২ জনেরি হবে.

এর পর থেকে আমাদের ঘন্টার পর ঘন্টা কথা হতে থাকে...শেয়ারিং, কেয়ারিং, দুষ্টু, মিষ্টি ঝগড়ার মধ্যদিয়ে আমাদের সম্পর্কটা চলতে থাকে...ওকে একটা ফেসবুক একাউন্ট খুলে দেই..তখন যদিও এন্ড্রয়েড মোবাইল তেমন ছিল না..এখন আমরা ফেসবুকেই কথা বলতাম বেশি..সে ছবি দিতো আমিও ছবি দিতাম..মাঝে মাঝে সে বলতো

আমি ভাবতাম আমার বিয়ে হবে কোন ডাক্তার/ইঞ্জিনিয়ার অথবা চাকুরীজীবীর সাথে ভাবতেও পারিনি আমি একজন ক্রিকেটারের বউ হব..আমি সাকিব আল হাসান এর অন্ধভক্ত ছিলাম..তাই ও সবসময় সাকিবের খেলা দেখতো, ডাউনলোড করে সাকিবের ছবি পাঠাতো..হঠাৎ সাকিবের বিয়ে হয় সময়টা ১২-১২-১২ আমার এখনো মনে আছে সে বলেছিলো

-ঐ তোমার না বিয়ে আজকে তুমি কথা কেন বলো?
সে সাকিব আর শিশিরের ছবি দিতো আর ক্যাপশন দিতো
"আমি আর আমার জামাই"
এভাবেই খুনসুটি চলতে থাকে আমাদের...!"

সে আমাকে অনেক কেয়ার করতো..সে প্রতিদিন সকালে ক্রিকেট প্রশিক্ষণে যাওয়ার জন্য ৬টা বাজে কল করে ঘুম থেকে তুলে দিতো...সকালে "শুভ সকাল" আর রাতে "শুভ রাত্রি" ছাড়া কারো দিন শুরু আর শেষ হতো না...এর মাঝে দেখা করি কয়েক বার..সব মিলিয়ে মোট ৪ বার দেখা হয় আমাদের আর ৭ মাস পুর্ণ হয় একসাথে পথচলার.. আমাদের খুব তাড়াতাড়ি মারামারি লেগে যেত..সব সম্পর্কের মত আমাদের ও মাঝে মাঝে ঝগড়া করে ১-২ দিন কথা না বলার প্রথা চালু ছিলো..যদিও দোষ ২ জনেরি থাকতো তাই ঝগড়ার পর ২ জন ২ জনকে সরি বলতাম...তার সাথে কথা না হলে খুব খারাপ লাগতো.. নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসতাম...আর সেও কম ছিলো না.!!

তাকে ভালোবেসে আমি ময়না বলে ডাকতাম...আমি ওকে ছাড়া কিছুই বুঝতাম না..ক্রিকেট প্রশিক্ষনে গেলেও ২-৩বার তার সাথে কথা বলতাম...ও যেকোনো কাজ করার সময় আমাকে জানাতো আর কোথাও বেড়াতে যাওয়ার আগেও সে আমার অনুমুতি নিতো..আর কাকতালীয় ভাবে আমরা ২ জন ২ জনের প্রথম ভালোবাসা ছিলাম...আমাদের ঝগড়া হলে মাঝে মাঝে আমরা ১-২ দিন কথা না বলে থাকতাম.. ঠিক তেমনি হঠাৎ কোনো এক কারণে আমাদের তুমুল ঝগড়া হয়… ৩ দিন আমাদের কথা হয়নি আমাদের...দোষটা ছিলো আমারই... সে খুব রাগি ছিলো তাই তিন দিন ইচ্ছা করলেও সে রাগ বজায় রেখে কল বা মেসেজ দেয় নি...কিন্তু আগে ঝগড়া হলে ঠিকই দি।

০৩-০৩-২০১৩
সকাল ১০টা,
হটাৎ মোবাইলটি বেজে উঠে...কল করে ছিলো সুমুর চাচাতো বোন...কিন্তু অপর প্রান্ত থেকে কান্নার আওয়াজ ছাড়া আর কিছুই শুনতে পাচ্ছিলাম না... কান্না থামার অপেক্ষা করছিলাম..অবশেষে কান্না থামার পর তাকে কান্নার কারণ জিজ্ঞাস করতেই সে যা বললো তা শুনার জন্য আমি প্রস্তুত ছিলাম না মোটেও...সুমু সকালে নাকি মারা গেছে..সিলেট ইবনে সিনা হাসপাতালে.. তার পেটে নাকি একটি রোগ ছিলো ২ তারিখ রাতে ব্যথা করতে থাকায় তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় আর সকালেই ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষনা করে.।

আমার কি ভাগ্য দেখেন, ভালোবাসার মানুষটাকে শেষ বার একটু দেখাতো দূরে থাক তার জানাজা ও পড়তে পারলাম না.. সেদিনি বন্ধু সিদ্দিক কে নিয়ে তার বাড়িতে যাই.. গিয়ে দেখি অনেক মানুষের সমাগম. সেখানকার এক বন্ধুকে নিয়ে তার কবরটাতে যাই. কবরের কাছে কোনো কথা না বলে অনেকক্ষণ ছিলাম...কত সময় ছিলাম নিজেও জানি না. বুঝাতে পারবোনা সেই সময়কার অনুভুতিটা...মনে হচ্ছিলো আমার হৃদপিন্ডটা কে কেও ছুরিকাঘাত করতে করতে ঝাঁঝরা বানিয়ে ফেলছে.. চিৎকার দিয়ে কান্না করতে ইচ্ছা করছিলো কিন্তু তা করিনি. কারণ সেটি ছিলো গ্রাম্য এলাকা, আমি চাইনি আমার জন্য আমার ভালোবাসার অপমান হোক... আমি চাইনি কেও বলুক যে ''মারা যাওয়া মেয়েটির সাথে একটি শহুরে ছেলের সম্পর্ক ছিলো"।

তারপর সিদ্দক আর মিজান (সিলেটের বন্ধু) এর অনুরোধে সেখান থেকে চলে আসি..সুমুদের বাসার সামনে মোটরসাইকেল রাখার দরুন আবার তাদের বাসার সামনে যেতে হয়. তখন সুমুর চাচাতো বোন আমাকে দেখে খুব কান্না করেছিলো...বুকের ভেতর খুব কষ্ট নিয়ে ফিরি..মোটরসাইকেল চালাতে পারছিলাম না.  বার বার অমনোযোগী হয়ে পড়ছিলাম. সিদ্দিক এইসব দেখে আমাকে জোর করে ব্যাকসিটে বসতে বাধ্য করে... ১ ঘন্টার রাস্তা আমি শুধু কান্না করে করেই এসেছিলাম সেদিন...চিৎকার করে কান্না করছিলাম... পরিচিত অপরিচিত অনেকেই দেখছিলো আমার দিকে অবাক নয়নে...!


কিভাবে যেনো আমার পরিবারে ব্যাপারটা জানাজানি হয়ে যায়..আমার বোন আর আমার কাজিনরা আমাকে অনেক ভাবে সান্তনা দেয়...আমি শকে ছিলাম খুব. আমি খাওয়াদাওয়া, ক্রিকেট প্রশিক্ষণ ও বন্ধ করে দিই...আমাক এখন আর কেও সকালে "শুভ সকাল" আর রাতে শুভ রাত্রি" বলে বিদায় নিবে না.কেও ভোরে ক্রিকেট প্রশিক্ষণের জন্য ডেকে দিবে না. কারো সাথে ঝগড়া করা যাবে না. বলতে গেলে পুরাই ভেংগে পড়েছিলাম৷  বন্ধু সিদ্দিক অনেক বুঝিয়েছিলো সব উপরওয়ালারর ইচ্ছা. ক্রিকেটের সব সরঞ্জাম ছাদে নিয়ে ফেলে এসেছিলাম..খুব অসুস্থ হয়ে পড়েছিলাম. তবুও সপ্তাহের একদিন গিয়ে তার কবর জিয়ারত করে আসতাম।

প্রায় ১মাস পর.
কোনো একদিন একটি অচেনা নম্বর থেকে কল আসে...
কথা শুনে বুঝতে পারলাম সুমুর মা. কল দিয়ে খুব কান্নাকাটি করছিলেন তিনি. .বলেছিলেন তাদের বাসায় যেতে.
এপ্রিলের কোনো এক শুক্রবার...
তাদের বাসার সামনে আমি..দরজা খুলে আমাকে দেখে প্রথমে চিনতে না পারলেও পরে পরিচয় শুনে সুমুর মায়ের বাঁধভাঙা অশ্রু ঝরতে লাগলো... আর বলতে লাগলো.।

বাবা,আমার জানা ছিলো না তোমরা একজন একজনকে ভালোবাসতে... ও আমাকে কখনো বলে নি...মেয়েটা আমার খুব ভালোছিলো. কোনো ছেলে এমনকি নিজের খালাতো মামাতো ভাইদের সাথেও কথা বলতো না ও. জানিনা তোমাদের পরিচয় কিভাবে হয়েছে, তবুও আমার মেয়ের জন্য হলেও মাঝে মাঝে এসো বাবা... তোমাকে দেখলে আমি আমার মেয়েকে দেখবো বাবা. আমার মেয়েকে দেখবো.( কান্না করতে করতে)

আমি বুঝাতে পারবো না আমি কি অনুভব করছিলাম. একজন মায়ের মেয়ের প্রতি বিশ্বাস. ভালোবাসা. মেয়ের পছন্দকে সম্মান.   আমার চোখ থেকে ও অবিরাম অশ্রু ঝরছিলো সেদিন.  অনেক বুঝিয়ে আবার আসার কথা দিয়ে সেদিনের মত চলে আসি ..আমি মাঝে মাঝে যেতাম তার কবরটাও জিয়ারত করতাম তার পরিবারকেও সময় দিতাম.৷ সেই সব দিনগুলিতে আমি খুবি অসুস্থ থাকতাম. একদিন আমার বন্ধু সিদ্দিক আমাকে সিলেট থেকে অনেকদুরে জয়ন্তা রাজবাড়ি নিয়ে গেলো  ওখানে গিয়ে বসলাম. হটাঠ সিদ্দিক আমাকে বলল

দোস্ত তোর সুমু তো তোকে কখনো এভাবে দেখতে চায়নি!! তোকে নিয়ে তো সুমুর অনেক স্বপ্ন ছিলো.।। সে সবসময় তোকে সাপোর্ট করে গেছে. তোর ক্রিকেট জীবনেও ওর অবদান অনস্বীকার্য!! আর তুই?  তুই কি করছিস?  তুই তো ওর সব স্বপ্নকে অপমান করছিস! তুই কি ওর স্বপ্ন ভেংগে দিবি? তোর পরিবারের দিক দেখ!! উপরওয়ালা না করুক আজ ওর জায়গাতে তোর কিছু হলে ওর কি কষ্ট হতো না? নিশ্চয় হতো!! তাহলে এখন কি ওর কষ্ট হচ্ছেনা? তাকে অপমান করছিস না তুই?

দয়া করে ঠিক হ দোস্ত আমি আছি তোর পাশে.
সিদ্দিকের এইসব কথা শুনার পর সেদিন অনেক কেঁদেছিলাম তাকে জাড়িয়ে ধরে... চিৎকার করে বলেছিলাম সেদিন সুমু খুব ভালোবাসি তোমাকে বেশি ভালোবাসি. আজীবন ভালোবাসবো.৷ তোমাকে কখনোই ভুলতে পারবো না.  তারপর সেদিন ফিরলাম... বাবা মা আর সিদ্দিকের কথা ভেবে আমি ধিরে ধিরে ভালো হতে লাগলাম. কিন্তু প্রায় রাতে তাকে আমি স্বপনে দেখতাম.. মাঝরাতে তাকে দেখে আমার ঘুম ভেংগে যেতো.. চিৎকার দিয়ে উঠতাম..মা তখন আমার পাশে এশে ঘুমাতেন. সিদ্দিকের সহযোগীতায় আবার ক্রিকেট শুরু করলাম..প্রথমে অসুবিধা হলেও পরে ঠিক হয়ে যায়.।

বন্ধু, আড্ডা, খেলা নিয়েই থাকতাম..ওর কথা মনে পড়লে সিদ্দিককে নিয়ে বেরিয়ে যেতাম..অনেক সাহায্য করেছে সিদ্দিক আমাকে...সে আমার জীবনের একটি অংশ..আগে মাঝে মাঝে যেতাম সুমুদের বাড়িতে..কল ও দিতাম ওর আম্মাকে..কিন্তু সিম রেজিস্ট্রেশনের পর থেকে ফোন বন্ধ ওনার..এখন বছরে একবার যাই তার কবর জিয়ারত করে আসি আমি..এখন উপরওয়ালা আমাকে ভালোই রেখেছেন..জানি একদিন বিয়ে করতে হবে অন্য একজনকে.. হয়তো প্রেম-ভালোবাসাও আসতে পারে..কিন্তু আমার প্রথম ভালোবাসা আমার সুমু কে আমি কখনো ভুলতে পারবো না।

এখনকার প্রেমিদের নিয়ম কথায় কথায় ব্রেকাপ করা.. কিন্তু আমার সুমু সে তো এই দুনিয়ারর সাথেই ব্রেকাপ করে গেলো... সবাই তার জন্যে দোয়া রাখবেন..আমার জন্যও করবেন যাতে আমি আমার পরিবার ও আমার বন্ধুদের নিয়ে সুখে থাকতে পারি আর জীবনে যাতে মানুষের মত মানুষ হতে পারি.

(বাস্তব ঘটনার প্রতিফলন)

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.